Thursday, January 23, 2014 | comments


এখন কী করবে বিসিবি! বিশ্ব ক্রিকেটের তিনমোড়লভারত, ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে ক্রিকেট জাতি হিসেবে বাংলাদেশেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি ্যাঙ্কিংয়ের একেবারে তলানিতে থাকায় মোড়লদের প্রস্তাবিত দ্বি-স্তরবিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটে টেস্ট মর্যাদা থাকলেও কার্যত টেস্ট ক্রিকেটের বাইরেই থাকতে হবে বাংলাদেশকে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোসহ জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ খেলেই দিন গুজরান করতে হবে বাংলাদেশকে ৪৩ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্ভাবনার ক্রিকেট তো তাহলে এক প্রকার শেষই হয়ে যাবে!
ভারত, ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াপজিশন পেপারনামে যে প্রস্তাব দিয়েছে তার সারকথা হলো, যেহেতু ক্রিকেট বিশ্বে আইসিসির মূল আয়টা এই তিন দেশের তরফ থেকেই আসে, তাই ক্রিকেটের সর্বময় ক্ষমতাটা থাকতে হবে তাদেরই হাতে। ক্রিকেট থেকে আয়ের সিংহভাগটাও নিয়ে নিতে চায় তারাই। তবে বাকি সাতটি দেশেরক্ষতিপোষাতে সেই দেশগুলোর আয় বাড়ানোর একটা প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যেটি বিশ্লেষকদের মতে অনেকটা মুলা ঝুলিয়ে রাখার মতো। এই প্রস্তাবে সায় দিলে স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের আয় বাড়বে ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির মুখেই পড়বে দেশের ক্রিকেট
প্রস্তাবটি গৃহীত হলে আইসিসি আয়োজিত যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের বিনিময়ে সদস্য দেশগুলোর অর্থ প্রাপ্তি বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। খুব সম্ভবত, এই এক খাত থেকে অতিরিক্ত অর্থপ্রাপ্তির আশাতেই প্রস্তাবের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিউজিল্যান্ড একে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু টেস্ট ্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বরে থাকা নিউজিল্যান্ড কিন্তু ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে খেলারঝুঁকিথেকেও মুক্ত
এই প্রস্তাবে সবচেয়ে বিপদে ্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বরে থাকা জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ। এটি গৃহীত হলে নগদনারায়ণ হিসেবে কিছু অর্থপ্রাপ্তি হয়তো ঘটবে, কিন্তু যে কারণে বোর্ডটা গঠিত, সেই ক্রিকেটই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিন অক্ষশক্তির প্রস্তাব আইসিসিতে পাস হলে টেস্ট মর্যাদা থাকলেও বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে খেলতে হবে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, হল্যান্ড, বারমুডা, কেনিয়া প্রভৃতি দেশের সঙ্গে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট। যাদের টেস্ট মর্যাদাই নেই, তাদের সঙ্গে খেলাটা তাইটেস্টহিসেবে গণ্য হওয়ার কোনো কারণই থাকতে পারে না
তো গেল মাঠের খেলার প্রশ্ন। ধরেই নেওয়া যাক, বাংলাদেশ এই দলগুলোর সঙ্গেই খেলতে রাজি হলো। কিন্তু তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোষাগারের অবস্থা কেমন হবে? অক্ষশক্তির প্রস্তাব পাস হলে শক্তিশালী টেস্ট দলগুলোর সঙ্গে খেলাটা হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্য সুদূর পরাহত এক ব্যাপার। তাদের মাটিতে গিয়ে খেলার কথা বাদ দিন। বাংলাদেশের মাটিতে এসেও ওই দলগুলোর খেলার আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। তারা কেন বাংলাদেশের সঙ্গে খেলবে! আইসিসিও বাধ্য করতে পারবে না। এখন যেটা এফটিপির (ভবিষ্যৎ সফরসূচি) কারণে করা হয়। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলার সুযোগ পেত না, ব্যাপারটি দাঁড়াবে ঠিক তেমনই
এখন আসা যাক, বাংলাদেশের ক্রিকেটের এতে ক্ষতিটা কেমন হবে সেই আলোচনায়। আচ্ছা ধরুন, হল্যান্ড সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফর করবে। এতে কি সাধারণ দর্শকেরা সেই সিরিজ দেখতে কোনো উৎসাহ দেখাবেন? দিনের পর দিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজই তো দর্শকদের মধ্যে তৈরি করবে নিদারুণ বিরক্তি আর একঘেয়েমি! সহযোগী সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সিরিজ সম্প্রচারে আগ্রহই বা দেখাবে কোন টিভি চ্যানেল? বিজ্ঞাপনের বাজারের কথাই ধরুন। আফগানিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজে স্পনসর পেতে তো কালঘাম ছুটে যাবে বিসিবির!
ক্রিকেটের তিন মোড়লের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা ইতিমধ্যেই করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিকে ইতিমধ্যেই ২৮ ২৯ জানুয়ারি দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় আইসিসির সভায় এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করার ক্ষমতা দিয়েছে সে দেশের বোর্ড পর্ষদ। শ্রীলঙ্কাও এই প্রস্তাবটির বিরুদ্ধেই নিজেদের অবস্থান গ্রহণ করেছে। জিম্বাবুয়ে যে এই প্রস্তাবের বিপক্ষেই যাবে, সেটাও বলে দেওয়া যায়। কারণ ছোট ক্ষমতাহীন বোর্ড হিসেবে পুরোপুরি দক্ষিণ আফ্রিকার দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল জিম্বাবুয়ে কোনোভাবেই প্রোটিয়া বোর্ডের বাইরে গিয়ে কথা বলবে না
নিউজিল্যান্ডের কথা বাদ দিন। তারা ইতিমধ্যেই মাথা বেচে বসে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কী করবে? বিসিবির সভাপতি কি দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে দুবাইয়ের আইসিসি বৈঠকে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন? ব্যাপারটি নিয়েই ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের উৎকণ্ঠা এখন চরমে
একটা বড় সমস্যা হয়েছে কিছুদিন আগেই। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ যখন এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছিল, তখন বাংলাদেশের পক্ষে খুবজোর গলাছিল ভারতের। সমস্যাটা তৈরি করেছে এটাই। বিসিবি কি এই মুহূর্তে ভারতের প্রস্তাবের বাইরে গিয়ে কথা বলতে পারবে? এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা বাদ দিন। আগামী জুনে ভারত নাকি একটি ত্রিদেশীয় প্রতিযোগিতা খেলতে বাংলাদেশে আসবে। ভারতের আগমন মানেই বিসিবির কোষাগার ফুলে-ফেঁপে ওঠা। ভারতের আগমন এতটাই এতটাই লাভজনক যে কানাঘুষা আছে, ভারত একবার এলে কয়েক বছর রাজস্ব নিয়ে কোনো চিন্তাই নাকি করতে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে বিসিবি তো সত্যিই উভয়সংকটে!
বিসিবি বিষয়টিতে নীরব থেকেও দুকূল করা করতে পারে। আইসিসির সংবিধান অনুযায়ী বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলে ১০ সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে সাতটি ভোটের দরকার পড়ে। এরই মধ্যে চারটি দেশ এর বিপক্ষে সরবে অবস্থান নিয়ে নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত থাকলেও সংস্কার প্রস্তাব পাস হওয়ার কথা না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সংস্কার প্রস্তাবে সবচেয়ে ক্ষতির সামনে দাঁড়িয়ে যে দুই দল, তাদেরই তো সবচেয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত। তা ছাড়া ভারতের চাপে কিংবা কূটনৈতিক চালে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকারা যে অবস্থান পরিবর্তন করবে না, সেই নিশ্চয়তাও কি আছে?
সবচেয়ে বড় কথা, ক্রিকেট জাতি হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্বই যেখানে সংকটের মুখে, সেখানেলাভ-ক্ষতি’, ‘রাজস্বইত্যাদি শব্দগুলো কানে কেমন যেন বেসুরো বোল তুলছে! বিসিবি কি ব্যাপারটি ভেবে দেখছে?
বাংলাদেশের ক্রিকেট এই মুহূর্তে এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে আমরা কেবলই ওপরে ওঠার কথা ভাবতে পারি। আমরা এখন জিততে শুরু করেছি। টেস্ট ক্রিকেটে ্যাঙ্কিংটা তলানিতে হলেও টেস্টটা আমরা এখন বেশ ভালোই খেলছি। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো টেস্ট আমরা নিয়মিত বিরতিতে জিততে শুরু করব! এমন একটি পরিস্থিতিতে ক্রিকেট বিশ্বের জমিদার হিসেবে নিজেদেরকে তুলে ধরা তিন অক্ষশক্তির এই প্রস্তাব যেন মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার মতোই। পৃথিবীতে বোধ হয় আর একটিও খেলা নেই যে খেলার সর্বোচ্চ সংস্থা কোনো সদস্য দেশকে এমন অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিতে পারে!



Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. FREE ONLINE EARNING TRANING - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger