অধিনায়ক হিসেবে আলাদা বিশেষত্ব এখনো খুব একটা দেখাতে পারেনি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। তবে বড়সড় একটা চমক উপহার দিয়েছিলেন দিন বিশেক আগে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুবাই টেস্টে টস জিতে বেছে নিলেন ফিল্ডিং! দুবাইয়ে টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর দুঃসাহস দেখানো প্রথম অধিনায়ক তিনিই। চার দিন পর সেই চমক রূপ নিয়েছিল আরও বড় বিস্ময়ে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ৯ উইকেটে!
সেই তুলনায় মিরপুরে টস জিতে বোলিং নেওয়াটা খুব বিস্ময়কর কিছু নয়। আগের ১০ টেস্টে আরও তিন অধিনায়কের পছন্দ ছিল বোলিং। আর সকালে উইকেটে বাউন্স-সুইং যতটুকু মিলেছে, সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তিটা খেলা শুরুর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সবাইকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন ম্যাথুস। তবে উইকেট-কন্ডিশন যা-ই থাকুক, টেস্ট ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া অধিনায়ক প্রথম দিনে অন্তত চাপে থাকেন সব সময়ই। প্রত্যাশা পূরণ না হলেই যে চারপাশ থেকে ধেয়ে আসবে সমালোচনার তির। কাল দিন শেষে তাই দারুণ স্বস্তিতেই ছিলেন ম্যাথুস। পেসারদের ভালো বোলিং তো ছিলই, তবে লঙ্কান অধিনায়কের রাতের ঘুমটা ভালো হওয়ায় নিশ্চয়ই ভালো হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ‘ভূমিকা’য়ও। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই তো ছুড়ে এসেছেন উইকেট!একসময় অবশ্য এটিই ছিল নিয়মিত দৃশ্য। টেস্টের আঙিনায় প্রথম ১০ বছরে ব্যাটিংটাই ছিল বাংলাদেশের ‘একিলিস হিল’। প্রথম সেশনেই ৩-৪ উইকেট হারানো, লোয়ার মিডল অর্ডারের চেষ্টায় কোনো রকমে মান বাঁচানো একটা স্কোর। কখনো কখনো টপ অর্ডারের সঙ্গে ধসের মিছিলে শামিল হতো মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডারও। বিব্রতকর স্কোরই একসময় হয়ে গিয়েছিল স্বাভাবিক। একটি তথ্যই টেস্টে বাংলাদেশের টপ-অর্ডারের দুর্দশা বোঝাতে যথেষ্ট। গতকালের দুর্দশাসহ ১০০ ছোঁয়ার আগেই বাংলাদেশ দল ৪ উইকেট হারিয়েছে ৮২ টেস্টে ৯১ বার! অবিশ্বাস্য শোনাতে পারে, কিন্তু এটিই সত্যি। ৫৬ শতাংশের বেশি ইনিংসেই (১৬১ ইনিংস) তিন অঙ্কের আগে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে বছর দুয়েক ধরে চিত্রটা পাল্টে গিয়েছিল অনেকটাই। গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে ৫০১, মার্চে গলে ৬৩৮, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই মিরপুরেই ৫৫৬ রানের ইনিংসগুলোয় ছিল ব্যাটিংয়ে পরিণতি আসার প্রমাণ। ব্যাটিং-দুঃস্বপ্নের ভূতকে কাছে ভিড়তে না দেওয়ার উদাহরণ আছে বাকি ইনিংসগুলোর বেশির ভাগেই। কাল হঠাৎই ভর করল সেই পুরোনো ভূত। কীভাবে এবং কেন?
খেলাটার ধরন একটি ব্যাপার তো বটেই। ক্রিকেটে ভালো দিন যেমন আসে, তেমনি খারাপ দিনও আসে। তবে ভালো-খারাপ দিনের ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাও থাকে। ম্যাচের আগে মুশফিক-সাকিবদের কণ্ঠেও কোরাস ছিল স্পোর্টিং উইকেট। সেই চাহিদা মেটাতেই কিনা, প্রথাগত বাংলাদেশ উইকেটের চেয়ে একটু বেশিই বাউন্স ছিল কাল মিরপুরের উইকেটে। সকালে সিম মুভমেন্টও মিলেছে বেশ। তাতেই কি নাজেহাল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা?
সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসানের দাবি, লঙ্কানদের ভালো বোলিং আর ব্যাটসম্যানদের কিছু বাজে শট মিলিয়েই কালকের ব্যর্থতা। তবে দিনের সেরা বোলার শামিন্দা ইরাঙ্গা কিন্তু সরাসরিই বলেছেন, ‘সর্বশেষ সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে আরব আমিরাতে উইকেট প্রায় একই ছিল। কিন্তু পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা উইকেট উপহার দেয়নি, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বোলারদের কাজ একটু সহজ করে দিয়েছে।’
টপ-অর্ডারের আউটগুলো দেখলে ইরাঙ্গার কথাই সত্যি মানতে হবে। ৪০ মিনিটের অচেনা ইনিংসে তামিম ইকবাল সীমানায় ধরা পড়েছেন হুক করতে গিয়ে। ব্যাটের কানায় লেগে বেশ কয়েকবার পার পাওয়া পরও শামসুর রহমান আউট হয়েছেন শরীর থেকে বেশ দূরে খেলে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের বিস্ময় মুমিনুল হক আউট হয়েছেন সম্ভবত দিনের সবচেয়ে বাজে শটে। উইকেট ছুড়ে আসার দায় নিজের কাঁধে নিয়েছেন সাকিবও। উচ্চাভিলাষী শট না খেললেও বলের লাইন মিস করায় দায় এড়াতে পারবেন না মার্শালও। দিনের বিশ্লেষণে তাই বলতে হবে—‘পুরোনো রোগ ফিরে এল!’
কাল দুপুরের পর থেকেই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো হয়ে গেছে। সবচেয়ে ভালো থাকার কথা আজ ও কাল। ম্যাচে টিকে থাকতে হলেও তাই বাংলাদেশকে এখন করতে হবে দারুণ কিছু।
Post a Comment